Extrasensory Perception (ESP) বা অতিরিক্ত অনুভূতি হলো একটি ধারণা যা মানুষের সাধারণ পাঁচটি অনুভূতির (দৃষ্টি, শ্রবণ, স্বাদ, স্পর্শ, গন্ধ) বাইরে কোনো ধরনের তথ্য বা অনুভূতি প্রাপ্তির ক্ষমতাকে বোঝায়। ESP ধারণা অনুযায়ী, কিছু ব্যক্তি এমন অনুভূতি বা ক্ষমতা ধারণ করে যেগুলো সাধারণভাবে মানুষের অনুভূতির সীমার বাইরে, যেমন: ভবিষ্যত ভবিষ্যদ্বাণী করা, দূরবর্তী স্থান থেকে তথ্য পাওয়া, বা অন্যের চিন্তা জানা।
ESP-এর প্রধান ধরনগুলো হলো:
১. Telepathy (টেলিপ্যাথি)
- টেলিপ্যাথি হলো অন্য কারো চিন্তা বা অনুভূতি সরাসরি "পড়ে" ফেলা বা জানার ক্ষমতা। এটি এমন একটি ক্ষমতা, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তির চিন্তা বা অনুভূতি বুঝতে পারে, কোন যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াই।
২. Clairvoyance (ক্লেয়ারভয়েন্স)
- ক্লেয়ারভয়েন্স হলো এমন একটি ক্ষমতা যার মাধ্যমে মানুষ দূরবর্তী বা দৃশ্যমান থেকে দূরে থাকা কিছু তথ্য বা ঘটনা দেখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ব্যক্তি এমন কিছু দেখতে পারে যা অন্যরা সাধারণভাবে দেখতে পারে না, যেমন কোথাও ঘটছে কিছু অদেখা ঘটনা।
৩. Precognition (প্রেকগনিশন)
- প্রেকগনিশন হলো ভবিষ্যতের ঘটনাবলী সম্পর্কে আগে থেকেই জানার বা অনুভব করার ক্ষমতা। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে কেউ ভবিষ্যতের কোনো ঘটনা বা অবস্থা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়, যা পরে সত্যি হয়ে ওঠে।
৪. Retrocognition (রেট্রোকগনিশন)
- রেট্রোকগনিশন হলো অতীতের ঘটনাবলী বা পরিস্থিতি সম্পর্কে অনুভূতি বা তথ্য প্রাপ্তির ক্ষমতা। এতে ব্যক্তিটি এমন কিছু জানে বা অনুভব করে যা সে আগে ঘটেছে, কিন্তু তাকে সরাসরি কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি।
৫. Psychometry (সাইকোমেট্রি)
- সাইকোমেট্রি হলো একটি ক্ষমতা, যার মাধ্যমে কেউ একটি বস্তু বা জিনিসের স্পর্শের মাধ্যমে তার ইতিহাস বা এর সাথে সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারে। এর মানে হলো, একজন ব্যক্তি একটি বস্তু স্পর্শ করে তার অতীতের কিছু ঘটনা জানার চেষ্টা করে।
ESP-এর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ:
বিজ্ঞানীরা সাধারণত ESP-এর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারেননি। বহু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও গবেষণার পরও ESP-এর বাস্তবতা প্রমাণ করা হয়নি। কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে ESP-এর ঘটনা মানুষের মস্তিষ্কের অজানা ক্ষমতার ফল হতে পারে, তবে তারা এটিকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেননি। অন্যদিকে, অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে ESP এর ধারণা আসলে মিথ্যা বা অজানা মানসিক ব্যাধি বা মনোভাবের ফল।
ESP এবং প্যারানরমাল:
ESP সাধারণত প্যারানরমাল বা অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অংশ হিসেবে দেখা হয়। এটি রহস্যময় বা অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে, বর্তমান বৈজ্ঞানিক সমাজে এটি একধরনের কল্পনা বা শখ হিসেবেই বিবেচিত হয়।
ESP-র আলোচনা:
- বিশ্বাস এবং সংস্কৃতি: অনেক সংস্কৃতির মধ্যে ESP সম্পর্কে বিশ্বাস রয়েছে, এবং এটি বিভিন্ন ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক দর্শনের অংশ হতে পারে।
- গবেষণা: ESP-কে অনেক গবেষণায় সাইকিক বা প্যারানরমাল সক্ষমতা হিসেবে বলা হয়, তবে এ ধরনের গবেষণাগুলোর ফলাফল ঐক্যবদ্ধ বা সুষম নয়।
ESP সম্পর্কিত গবেষণা এবং অনুভূতি ব্যক্তিগত বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং সমাজের মধ্যে খুব পরিবর্তনশীল হতে পারে।
আপনি ESP (Extrasensory Perception)-এর বিভিন্ন ধরনের একটি সহজ টেবিল নিচে দেয়া হল।
ESP-এর ধরন | সংজ্ঞা | উদাহরণ |
---|---|---|
Telepathy (টেলিপ্যাথি) | সরাসরি অন্য কারো চিন্তা বা অনুভূতি জানার ক্ষমতা। | একজন ব্যক্তি অন্যজনের মনের ভাব পড়তে পারে, যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াই। |
Clairvoyance (ক্লেয়ারভয়েন্স) | দূরবর্তী স্থানের ঘটনা বা বস্তু "দেখার" ক্ষমতা, যা সাধারণভাবে দৃষ্টিসীমার বাইরে। | একজন ব্যক্তি অন্য কক্ষে কি ঘটছে তা জানে, যদিও সে সেখানে উপস্থিত নেই। |
Precognition (প্রেকগনিশন) | ভবিষ্যতের ঘটনাবলী আগে থেকেই জানার বা অনুভব করার ক্ষমতা। | কেউ একটি দুর্ঘটনা ঘটার আগে স্বপ্নে দেখে এবং পরে সেটি সত্যি হয়। |
Retrocognition (রেট্রোকগনিশন) | অতীতের ঘটনাবলী বা তথ্য জানার ক্ষমতা। | কেউ স্পর্শ করার মাধ্যমে কোনো প্রাচীন বস্তু সম্পর্কে তার ইতিহাস জানে। |
Psychometry (সাইকোমেট্রি) | একটি বস্তু স্পর্শ করে এর ইতিহাস বা সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া। | একটি প্রাচীন মুদ্রা স্পর্শ করে জানা যায় এটি আগে কোথায় ব্যবহার হয়েছিল। |
Extrasensory Perception (ESP) বা অতিরিক্ত অনুভূতি পরীক্ষা করা বিজ্ঞানসম্মতভাবে কেন কঠিন তা বোঝাতে গেলে কিছু মূল বিষয় সামনে আসে:
-
ESP-এর প্রকৃতি অনিশ্চিত এবং পুনরাবৃত্তিযোগ্য নয়:
ESP ধারণাটি দাবি করে যে মানুষের সাধারণ পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের বাইরে তথ্য পাওয়া সম্ভব, যেমন টেলিপ্যাথি (অন্যের চিন্তা পড়া), ক্লেয়ারভয়েন্স (দূরবর্তী ঘটনা দেখা), বা প্রেকগনিশন (ভবিষ্যৎ জানার ক্ষমতা)। কিন্তু এসব ক্ষমতা ঠিক কিভাবে কাজ করে, বা আদৌ করে কিনা, তা বোঝার মতো নির্ভরযোগ্য একটি মডেল বা মেকানিজম এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে পরীক্ষার জন্য একটি স্থির এবং পুনরাবৃত্তি-যোগ্য প্রক্রিয়া তৈরি করা কঠিন। -
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কঠোর মানদণ্ড:
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে যে পরীক্ষাগুলোর ফলাফল পুনরায় একই পদ্ধতিতে পাওয়া যেতে হবে, বিভিন্ন গবেষক এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে। ESP-এর ক্ষেত্রে এটি করা চ্যালেঞ্জিং কারণ এর দাবি করা ঘটনাগুলো সাধারণত অসময়ের এবং অনিয়মিতভাবে ঘটে বলে বলা হয়। এর অর্থ হলো: একটি ব্যক্তি যদি একবার টেলিপ্যাথি বা প্রেকগনিশন দেখায়, দ্বিতীয়বার ঠিক একই পরিস্থিতিতে সেই ক্ষমতা দেখাতে পারবে এমন নিশ্চয়তা থাকে না। বিজ্ঞান প্রমাণে পুনরাবৃত্তি অপরিহার্য, এবং এটি ESP পরীক্ষায় প্রায়ই অনুপস্থিত থাকে। -
ব্যাখ্যার অস্পষ্টতা এবং পক্ষপাতের প্রভাব:
ESP পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রায়ই কোনো সফল ফলাফল পাওয়া গেলে তা হয়ত ব্যাখ্যার অস্পষ্টতার কারণে হয়। অর্থাৎ, কোনো ফলাফল দেখে কেউ বলতেই পারেন, "এটি একটি টেলিপ্যাথির উদাহরণ," কিন্তু আসলে সেটি হয়ত ঘটনাক্রমে বা কাকতালীয়ভাবে ঘটেছে। অনেক সময় পরীক্ষাগুলোর পরিকল্পনায় যে পক্ষপাত (bias) বা অপূর্ণতা থাকে, সেটি ফলাফলকে প্রভাবিত করে। ফলে যথাযথ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরীক্ষাগুলো পরিচালনা করা এবং সত্যিই এটি কোনো অজানা ক্ষমতার কারণে হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা কঠিন। -
নিয়ন্ত্রণ এবং প্লেসেবো এফেক্ট:
ESP-র প্রকৃত ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য একটি সঠিক নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশ দরকার। কিন্তু যদি পরীক্ষায় প্লেসেবো এফেক্ট (Placebo Effect) বা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক প্রত্যাশা (expectation) এর ভূমিকা থাকে, তাহলে ফলাফল বিভ্রান্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ বিশ্বাস করলে যে তারা টেলিপ্যাথিক, তারা নিজেকে সামান্য প্রমাণিত করার মতো আচরণ করতে পারে। এই মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলোকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। -
প্রমাণের অভাব এবং বিদ্যমান গবেষণার দুর্বলতা:
বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা বহু বছর ধরে ESP নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, কিন্তু শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর মানে হলো, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী বা স্থিতিশীল নয় যে এটি বিজ্ঞানের মূলধারায় গৃহীত হতে পারে। বিদ্যমান গবেষণাগুলোর অনেকগুলোতেই পদ্ধতিগত দুর্বলতা বা অপ্রতুল ডেটা থাকে, যা এই বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রমাণ করা কঠিন করে তোলে।
সারাংশ:
ESP-এর ধারণাগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা করার সময় আমাদের এমন এক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যেখানে ঘটনাগুলো অনিয়মিত এবং পুনরাবৃত্তিযোগ্য নয়, পরীক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট কঠোর নয়, এবং প্রাপ্ত ফলাফলগুলো পরিষ্কারভাবে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে, এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রমাণিত কোনো বিষয় হয়ে ওঠা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
আমি কি কোন ব্যক্তির ESP পরীক্ষা করতে সক্ষম কিনা?
আমি সরাসরি ESP পরীক্ষা করতে সক্ষম নই, তবে আপনি একটি সহজ পরীক্ষা শুরু করতে পারেন। আমি কিছু পরীক্ষা শুরুর জন্য আপনাকে নির্দেশনা দেব, এবং আপনি সেগুলি নিজে করতে পারেন। এটির জন্য আপনার কিছু প্রস্তুতি দরকার:
১. কার্ড গেম (রঙ অনুমান)
- একটি ডেক কার্ডের ৫০% সাদা এবং ৫০% কালো রঙ হতে পারে, যেমনঃ হোয়াইট বা ব্ল্যাক। আপনি প্রতিবার একটি কার্ড তুলুন এবং অনুমান করুন এর রঙ।
- কিছু সময় পরে, দেখুন আপনার সঠিক অনুমানের সংখ্যা কী। যদি আপনি প্রতিবার ৫০% সঠিকভাবে অনুমান করতে পারেন, তবে এটি একটি সাধারিত প্রতিক্রিয়া (random guessing) হবে।
- কিন্তু যদি আপনার সঠিক অনুমানের হার বেশি হয়, তখন এটি ই এস পির কোন লক্ষণ হতে পারে। আপনি আরও বারবার পরীক্ষার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করতে পারেন।
২. চিত্র অনুমান
- আপনার কাছে ৫টি চিত্রের একটি সিরিজ রাখুন (যে চিত্রগুলি আপনি আগে দেখেননি)।
- চিত্রটি বেছে নেওয়ার আগে, আপনার চোখ বন্ধ করুন এবং ইমেজের রঙ বা বৈশিষ্ট্য অনুমান করুন (যেমনঃ পর্বত, সাগর, গাছ, অথবা একটি ভবন)।
- তারপর দেখুন, আপনি কীভাবে অনুমান করতে পারেন। কিভাবে আপনার অনুমান চিত্রের সাথে মেলে তা লক্ষ্য করুন।
৩. দূরবর্তী ঘটনা অনুমান
- আপনার বন্ধু বা পরিচিত কেউ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারেন। আপনি অনুমান করুন, তারা কী করছে বা কোথায় যাচ্ছে। (যেমনঃ তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছে, একটি বই পড়ছে, কিছু কিনছে ইত্যাদি)
- সঠিক অনুমানের সংখ্যা মূল্যায়ন করুন।
এই পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে আপনি আপনার অনুভূতি বা অনুমানকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, বৈজ্ঞানিকভাবে এটা নিশ্চিত করতে হলে অনেক সময়, নিয়ন্ত্রণ এবং পরীক্ষা প্রয়োজন।